সিসিকের তত্বাবধানে চলবে শহীদ মিনারের কার্যক্রম - সময় আমাদের ২৪

Latest

রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

সিসিকের তত্বাবধানে চলবে শহীদ মিনারের কার্যক্রম

সিসিকের তত্বাবধানে চলবে শহীদ মিনারের কার্যক্রম
সময় ডেস্ক : এখন থেকে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) দ্বারা পরিচালিত হবে। অপরদিকে শহীদ মিনার বাস্তবায়ন পরিষদের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে যেকোনো জাতীয় দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদনের ক্ষেত্রে নতুন ক্রমও নির্ধারণ করা হয়েছে। 

গত বৃহস্পতিবার রাতে সিলেট সিটি করপোরেশন মিলনায়তনে এক সভায় সর্বসম্মতভাবে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। সিলেট শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠার জীবিত দুই উদ্যোক্তা সদরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী ও মো. শওকত আলীর আহবানে আয়োজিত সভায় সিলেটের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনের প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভায় বিস্তারিত আলোচনার পর আটটি সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। 

সিদ্ধান্ত সমূহ হচ্ছে-১. সিলেট নগরের চৌহাট্টাস্থ সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের সামগ্রিক দায়িত্ব সিলেট সিটি করপোরেশন পালন করবে। শহীদ মিনারের কর্মচারী নিয়োগ, বরখাস্ত, কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান এবং শৃঙ্খলা সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়াদি সিটি করপোরেশনের দায়িত্বে পরিচালিত হবে।২. শহীদ মিনারে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ তথা ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক কার্যক্রম যাতে নির্বিঘ্নে এবং যথোপযুক্তভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ তা নিশ্চিত করবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কিংবা শহীদ মিনারের মৌল ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো সাম্প্রদায়িক কার্যক্রম যাতে না হয় সে বিষয়ে সিটি করপোরেশন সদা সতর্ক ও যত্নবান থাকবেন।

৩. বইমেলা ছাড়া অন্য কোনো বাণিজ্যিক কার্যক্রম শহীদ মিনারে করা যাবে না।

৪. শহীদ মিনারে কোনো অনুষ্ঠান বা যেকোনো কার্যক্রম আয়োজনের ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের পূর্বানুমতি প্রয়োজন হবে। অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে ২ ও ৩ নম্বর দফায় বর্ণিত নীতিসমুহ নিষ্ঠার সঙ্গে বিবেচনা করবেন। এছাড়া ধর্মভিত্তিক কোনো সংগঠনকে শহীদ মিনার ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে না।

৫. অমর একুশে ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণসহ অপরাপর অনুষ্ঠানসমুহ সঞ্চালনা সম্মিলিত নাট্য পরিষদ ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এ যাবৎকালে চলে আসা নিয়মানুযায়ী করবে। তবে ভবিষ্যতে এ সমস্ত সংগঠনের কোনো একটি বা উভয়টি অস্তিত্বহীন হয়ে পড়লে কিংবা দায়িত্ব পালনে অক্ষমতা প্রকাশ করলে তৎকালে ক্রিয়াশীল সংস্কৃতি ও নাট্যকর্মীগণ ঐকমত্যের ভিত্তিতে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

৬. শহীদ মিনার বাস্তবায়ন পরিষদ নেতৃবৃন্দের নামফলক বর্তমানে যেভাবে আছে সেভাবে সংরক্ষণ করা হবে। এখানে কোনো সংযোজন বা বিয়োজন করা যাবে না। পুনর্নির্মাণ, সংস্কার, সৌন্দর্য বৃদ্ধি ইত্যাদি ক্ষেত্রে নামফলক সাময়িকভাবে সরানোর প্রয়োজন হলে এতে লিখিত সকল নাম অবিকৃতভাবে এবং হুবহু ক্রমানুসারে তা পুনঃস্থাপন করতে হবে।

৭. বিভিন্ন জাতীয় দিবসে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের ক্ষেত্রে শহীদ মিনার বাস্তবায়ন পরিষদের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদনের যে নিয়ম চলে আসছে তা স্থগিত করা হলো। এখন থেকে বাস্তবায়ন পরিষদের নামে কোনো শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে না।

৮. শ্রদ্ধা নিবেদনের ক্ষেত্রে সরকারের কোনো মন্ত্রী থাকলে তিনি/তারা প্রথমে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, তারপর সিটি করপোরেশনের মেয়র, এবং তারপরে সংসদ সদস্য এই ক্রম অনুসরণ করা হবে। 

এরপর বর্তমানে চলে আসা নিয়মানুয়াযী বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনের প্রধান, বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান সরকারি প্রটোকল অনুযায়ী ক্রমানুসারে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করবেন। একইভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা ক্রম অনুসরণ করা হবে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন, শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠায় অন্যতম উদ্যোক্তা সদরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী, গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি ব্যারিস্টার আরশ আলী, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ধীরেন সিংহ, রাজনীতিবিদ বেদানন্দ ভট্টাচার্য, জেলা বিএনপির আহবায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার, গণতন্ত্রী পার্টির জেলা সভাপতি মো. আরিফ মিয়া।

আরো ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামীম সিদ্দিকী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আল-আজাদ, আহমেদ নূর, ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি সিকন্দর আলী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আমিনুল ইসলাম লিটন, সাধারণ সম্পাদক গৌতম চক্রবর্তী, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি মিশফাক আহমদ চৌধুরী মিশু, সাধারণ সম্পাদক রজনতান্তি গুপ্ত, সংস্কৃতিকর্মী বিভাষ শ্যাম যাদন প্রমুখ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন